বউ মরা নদীঃ ধলেশ্বরীর একটি প্রধান শাখা ঝিনাই নদী। এই ঝিনাই নদীর একটি অংশ বাসাইল উপজেলার উপর দিয়ে মির্জাপুরে চলে গেছে। নদীর ওপারে মির্জাপুরের ফতেপুর এপারে বাসাইলের সাকনাইর চর। এই গ্রামটি সোনার চর নামে পরিচিত। এই গ্রামের দক্ষিণ গ্রান্ত থেকে পূর্ব দিকের সেওটি থলপাড়া পর্যন্ত কিছু অংশ স্থানীয় ভাবে বউ মরা নদী নামে পরিচিত। শোনা যায় আজ থেকে প্রায় ২-৩ শত বছর আগে ইংরেজরা সবেমাত্র এ দেশ শাসন করতে শুরু করেছে। সে সময় পাটদিঘী গ্রাম স্থানীয় ভাবে যৌতুকী নামে পরিচিত ছিল। সেই গ্রামের জনৈক কৃষাণের স্ত্রী ছয় মাসের সন্তান রেখে মারা গেলে তিনি পুনরায় বিয়ে করেন। এ ছেলে বড় হলে বাবা রূপবতী এক কন্যার সাথে তার বিয়ে দেন। বিয়ের ৩-৪ বছর পর পুত্রবধূর ঘরে জনম নেয় কৃষাণের এক নাতি। ছয় কি সাত বছরের সময় ছেলেটি রোগাক্রান্ত হয়ে ক্ষ্যাপা স্বভাবের হয়ে যায়। বাবা ছেলের মঙ্গলের জন্য মানত করেন। ছেলে আরোগ্য লাভ করলেও বাবা মানত পুরো করেন না বরং ভুলে যান। কিছুদিন পরে বাবা সর্প দংশনে মারা যান। অপর দিকে ছেলেটি আরোগ্য লাভ করলেও সারাক্ষণ পাগারের জলে গা ডুবিয়ে রাখত। দুঃখ করে ছেলেটির মা, প্রায়ই বলত সাপে কেটেছে তোর বাবাকে, পানিতে খাবে তোকে। একদিন সে স্বপ্নে দেখল ঝিনাই নদীর পানি শুকিয়ে সৃষ্টি হয়েছে একটি সুড়ঙ্গ। সেখান থেকে বেড়িয়ে এলো কিম্ভূত কিমাকার এক বৃদ্ধা। সে স্মরণ করে দিল ছেলের বাবার মানতের কথা, সেটি পুরণ না হওয়ায় তার মৃত্যুর কথা। আগামী ৭ দিনে সেই মানত পুরা না হলে বউ এবং সন্তানের ভয়ংকর ক্ষতি হবে। মায়ের ঘুম ভেঙ্গে গেল। ভয়ে কাঁদতে ছিল সে। এ দিকে তার সৎ শাশুড়ীর অত্যাচার চরমে উঠে। বউটি ভুলে যায় স্বপ্নের কথা। একদিন সে তার সন্তান নিয়ে বোনের বাড়ীতে রওনা হয়। নদী পাড়ি দেওয়ার সময় মধ্য নদীতে এসে নৌকা থেমে যায়। মাঝি মাল্লারা সর্বাত্মক চেষ্টা করেও নৌকা চালাতে ব্যর্থ হয়। নৌকার এক যাত্রী সবাইকে উদ্ধার করে বলে, পিতা মাতাকে কষ্ট দিয়েছে, এতিমকে বঞ্চিত করেছে অথবা মানত করে সুফল পেয়েও মানত পূরণ করেনি এমন কেউ নৌকায় আছে কিনা, সবাইকে জিজ্ঞাস করা হয়, কাউকে পাওয়া যায় না। সবশেষে জিজ্ঞাসা করা হয় বউটিকে। স্বীকার করে তার সে স্বপ্নের কথা এবং মানত পরিশোধ না করার কথা। নৌকার যাত্রীরা সকলে মিলে বউটিকে দোষী সাব্যস্ত করে পানিতে ফেলে দেয়। ৮/১০ মাইল ভাটিতে পরদিন বউটির লাশ পাওয়া যায়। বউ মরেছে বহুযুগ আগে। সেই থেকে নদীটির নাম বউ মরা নদী। রাত্রিতে বউ মরা নদীর পারে নাকি আজও দুঃখিনী বধূর করুণ কান্নার আওয়াজ শুনতে পাওয়া যায়।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস